রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার এর ৮ টি টিপস জানুন
রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার কিংবা পুদিনা পাতার বিভিন্ন গুনাগুণ সম্পর্কে
অনেকেরই জানা নেই। আপনারা হয়তো অনেকেই রুপচর্চা নিয়ে অনেক সময় পেরেশানিতে পড়ে
যান। আপনারা যারা রুপচর্চা করতে চান তারা পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের জানাবো রূপচর্চায় পুদিনা
পাতার ব্যবহার , চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা এবং পুদিনা পাতার গুনাগুন
সম্পর্কে। তাই উপরিউক্ত বিষয়াবলী সম্পর্কে যদি আপনি জানতে চান তাহলে সম্পুর্ণ
আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। আশা করি অনেক উপকৃত হবেন।
পেজ সূচিপত্রঃ রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার
রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার
রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার, আমরা সবাই চাই সব সময় আমাদের ত্বকের
সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে। আমাদের ত্বককে সুরক্ষা রাখার জন্য প্রতিনিয়ত আমরা
কত কিছুই না করে যাচ্ছি। কিন্তু এর সঠিক সমাধান খুঁজে পাচ্ছি না। যার ফলে
আমরা আমাদের শরীরের ত্বকের যত্ন নিতে ব্যর্থ হই। পুদিনা পাতা এমন একটি
উদ্ভিদ যেটা আমাদের শরীরের ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আর এটা সম্পর্কে
আমাদের অনেকেরই অজানা। তাই চলুন আজকে রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার
সম্পর্কে জেনে নেই।
পুদিনা পাতার মধ্যে থাকা অ্যন্টি-ইনফ্লেমেটরি আপনার ত্বকের সৌন্দর্য
বৃদ্ধিতে সহায়ক। পুদিনা পাতা ব্যবহার করার ফলে আপনার ত্বককে ঠান্ডা রাখতে
সহায়তা করে। আমরা আমাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত যে শ্যাম্পু
ব্যবহার করে থাকি তার মধ্যেও পুদিনা পাতা যুক্ত আছে। রূপচর্চার জন্য পুদিনা
পাতার ব্যবহার সম্পর্কে নিচে দেওয়া হলো-
- পুদিনা পাতা মুখের ব্রণ দূর করার জন্য সহায়তা করে। পুদিনা পাতার মধ্যে আছে ভিটামিন এ এবং স্যালিসিলিক অ্যাসিড। ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাহলে ব্রণ বেশি হয়। পুদিনা পাতার মধ্যে থাকা অ্যন্টি-ফাঙ্গাল ও ব্যাকটেরিয়াল মুখের ব্রণ দূর করে মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই মুখের ব্রণ দূর করার জন্য পুদিনা পাতা পেস্ট করে তারপর সেটা মুখে লাগাতে হবে।
- শরীরের মধ্যে যদি কোন জায়গায় কেটে যায় তাহলে সে কাটা জায়গাটিতে পুদিনা পাতা পেস্ট করে লাগিয়ে দিলে ক্ষতস্থান ভালো হয়ে যায়। পুদিনা পাতার মধ্যে থাকা ইনফ্লেমেটরি ত্বকের ক্ষত, চুলকানি ইত্যাদি ভালো করে। আর ত্বকের ক্ষত, চুলকানি দূর করার জন্য আপনাকে পুদিনা পাতা বেটে তার রস সংগ্রহ করতে হব। এরপরে পুদিনা পাতার রসগুলো ক্ষতস্থানে বা চুলকানির স্থানে লাগিয়ে দিলে তাহলে তা ভালো হয়ে যাবে।
- ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পুদিনা পাতার গুণ অতুলনীয়। পুদিনা পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টিসেপটিক ত্বকের মধ্যে দাগ সৃষ্টি হতে বিঘ্ন ঘটায়। তাছাড়া সূর্যের আলোতে গেলে ত্বকের যে ক্ষতি হয় সেটা দূর করে দেয়।
- অনেক রাত পর্যন্ত সজাগ থাকার কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়। এই দাগের কারণে মুখের সুন্দর্য অনেক কমে যায়। সেক্ষেত্রে যদি আপনি পুদিনা পাতার ব্যবহার করেন তাহলে আপনার চোখের নিচে কালো দাগ নিমিষেই দূর হয়ে যাবে। চোখের নিচে যে জায়গায় কালো দাগটা হয় সেখানে রাতের বেলায় পুদিনা পাতার পেস্ট লাগান। এর ফলে আপনার চোখের নিচে কালো দাগ চলে যাবে।
পুদিনা পাতার উপকারিতা
পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নেই। পুদিনা পাতায় রয়েছে বিভিন্ন
রকমের গুনাগুন ও উপকারিতা। যেটা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। এতে যেসব উপাদান গুলো বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো হলো ভিটামিন এ,
ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি। যেটা ত্বকের ভালোর জন্য এবং মানুষের রোগ দমন করার
জন্য অনেক উপকারী। তাছাড়া রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার করলে ত্বক ভালো
থাকে।
পুদিনা পাতার মধ্যে আছে ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ ও পটাশিয়াম। এই জিনিসগুলো মানুষের
রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং
মানুষের মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা মজবুত রাখে।
হজমে সাহায্য করাঃ পুদিনা পাতায় আছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট,
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মেন্থল। খাদ্য হজম করার জন্য এই বিদ্যমান উপাদান গুলো
এনজাইম তৈরি করতে সহায়তা করে। পুদিনা পাতা মানুষের পাকস্থলীকে ঠান্ডা রেখে
অম্লীয় খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। যেটার কারণে মানুষের পেটের ভেতরকার
গোলমাল কমে যায়।
হাঁপানি কমিয়ে নিয়ন্ত্রণ করাঃ প্রতিনিয়ত রুটিন মোতাবেক আপনি যদি
পুদিনা পাতা খেতে পারেন তাহলে এটার ফলে আপনার বুকের মধ্যে কোন কফ জমবে না।
পুদিনা পাতা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
মেন্থল। এটার ফলে যদি আপনার ফুসফুস আটকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে মিউকাস
ছড়াতে সহায়তা করে। শুধু তাই নয় আপনার নাকের মধ্যে ফুলে যাওয়া মেমব্রেন কে
ভালো করে তুলে মেন্থল। কিন্তু বেশি পরিমাণে পুদিনা পাতা খাওয়া আপনার জন্য
ক্ষতিক।
মাথা ব্যাথা কমানোঃ পুদিনা পাতার মধ্যে যে মেন্থল রয়েছে সেটি
আপনার শরীরকে ঠান্ডা করে ব্যথা কমানোর জন্য সহায়তা করে। পুদিনা পাতার বিভিন্ন
উপাদান থেকে তৈরি মলম আপনার মাথা ব্যাথা দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন। এটা
নিমিষেই আপনার মাথা ব্যাথা দূর করে দিবে। আর যদি আপনার পুদিনা পাতার মলম
ব্যবহার করতে ভালো না লাগে তাহলে আরো একটি উপায় আছে। আর সেটি হলো পুদিনা পাতা
ভালো করে বেটে তার রস নিয়ে যদি আপনার কপালে ভালোভাবে দেন তাহলে এটার ফলে আপনার
মাথা ব্যাথা দূর হয়ে যাবে।
মানসিক স্বস্তি দেয়াঃ পুদিনা পাতা অত্যন্ত সুগন্ধিযুক্ত একটি ভেষজ
উপাদান। পুদিনা পাতার অতিরিক্ত সুগন্ধ আপনাকে হতাশা থেকে দূরে রাখবে। এটা আপনার
মানসিক চাপও দূর করতে সহায়তা করবে। তাই এগুলো দূর করার জন্য প্রতিনিয়ত পুদিনা
পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকের যত্ন করার জন্যঃ আপনার ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ রাখার জন্য
পুদিনা পাতার ব্যবহার অতুলনীয়। পুদিনা পাতায় রয়েছে অনেক স্যালিসাইলিক
অ্যাসিড যেটা আপনার মুখের ব্রণ দূর করার জন্য অনেক উপকারী। তাই ত্বকের সৌন্দর্য
বৃদ্ধির জন্য প্রতিনিয়ত পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন।
উপরিউক্ত উপকারিতা গুলো পুদিনা পাতা ব্যবহারের ফলে পাওয়া যায়। তাই আমাদের
নিত্যনতুন জীবনে পুদিনা পাতার ব্যবহার করা উচিত। এটি ব্যবহারের ফলে অনেক রকমের
উপকার পাবেন তার মধ্যে উপরোক্ত উপকারগুলো উল্লেখযোগ্য।
চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা
চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা, আপনাদের হয়তো অনেকেরই মাথার মধ্যে খুশকি
কিংবা রক্ত খেকো উকুন হয়ে থাকে। যেটার জন্য সব সময় অশান্তি ভোগ করতে হয়। আর
এটার বিভিন্ন রকমের সমাধান রয়েছে যেটা না জানার ফলে সব সময় আপনাকে অশান্তিতে
থাকতে হয়। পুদিনা পাতা, যেটা ব্যবহারের ফলে আপনার মাথার উকুন ও খুশকি দূর হয়ে
যাবে।
রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার তো বলা বাহুল্য। এটা রুপচর্চার জন্য অনেক
উপকারি। চলুন চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
পুদিনা গাছের শিকড় এবং পাতার রস মাথার চুলের উকুন দূর করার জন্য খুবই উপকারী
একটি ভেষজ। পুদিনা পাতা ও পুদিনা গাছের শিকড় ভালো করে বেটে এটার রস তৈরি করে
নিন।
তারপর এই রসগুলো আপনার মাথার চুলের গুড়া পর্যন্ত ভালোভাবে দিন। রস চুলের
গোড়ায় দেওয়ার পর খুবই পাতলা একটি কাপড় মাথার মধ্যে পেঁচিয়ে রাখুন। দেড়
থেকে দুই ঘন্টা পর গোসলে গিয়ে ভালো করে চুলের মধ্যে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
প্রতি সপ্তাহে যদি আপনি দুই থেকে তিনবার পুদিনা গাছের শিকড়ের এবং পুদিনা পাতার
রস ব্যবহার করতে পারেন তাহলে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে আপনার চুলের উকুন এবং
খুশকি দূর হয়ে যাবে।
এটা মাথার খুশকি দূর করে মাথাকে কে আরামদায়ক করে তুলবে। এছাড়াও পুদিনা পাতায়
আছে এক রকমের অ্যান্টিসেপটিক যা চুলের খুশকি দূর করার জন্য অত্যন্ত উপকারী।
পুদিনা পাতার মধ্যে যে মেন্থল রয়েছে এটা মাথাকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
মাথার মধ্যে অনেক ময়লা থাকে যার থেকে তৈরি হয়।
পুদিনা পাতার মধ্যে থাকা মেন্থল মাথার ময়লা গুলো দূর করে মাথাকে ঠান্ডা করে
তোলে। আপনি যদি আপনার চুলের যত্ন নিতে চান তাহলে পুদিনা পাতা ভালো করে বেটে তার
পেস্ট মাথায় ব্যবহার করুন। তাহলে আপনার মাথার মধ্যে থাকা খুশকিগুলোকে দূর করে
মাথাকে আরামদায়ক করে তুলবে।
চুলে ব্যবহার করার জন্য পুদিনা পাতার পেস্ট তৈরি সম্পর্কে চলুন জেনে নেই- আপনার
চুলের জন্য যতটুকু পুদিনা পাতা প্রয়োজন ততটুকু নিয়ে ভালো করে ধুয়ে এটার সাথে
হালকা পানি মিশিয়ে নিন। তারপরে এটি একটি ব্লেন্ডারের মধ্যে দিয়ে ভালো করে
ব্লেন্ড করুন। ব্লেন্ড করা পুদিনা পাতাটি খুব পাতলা না হয়ে এটি একটু ঘন ঘন হলে
আপনার চুলের জন্য উপকারী হবে।
পুদিনা পাতা ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে ব্লেন্ড করা পেস্টটি চুলের আগা থেকে গুড়া
পর্যন্ত ভালোভাবে মাখিয়ে নিন। এরপরে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর গোসলে গিয়ে ভালো করে
শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন। এটি ব্যবহার করার সাথে সাথেই ফল পেয়ে যাবেন।
প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার আপনি পুদিনা পাতার এই ব্লেন্ড করা পেস্টটি
ব্যবহার করবেন। এটার ফলে আপনার চুলের মধ্যে থাকা সমস্ত ময়লা, খুশকি ও উকুন দূর
হয়ে যাবে।
পুদিনা পাতার শরবত এর উপকারিতা
পুদিনা পাতার শরবত এর উপকারিতা পুদিনা পাতা যা খুবই উপকারী একটি ভেষজ। আমরা আগে
পুদিনা পাতার বিভিন্ন গুণাবলী, চুলের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা, রূপচর্চায়
পুদিনা পাতার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। কিন্তু পুদিনা পাতার শরবত
খেলে কি কি উপকার হয় সেটা হয়তো আমাদের অজানা।
পুদিনা পাতা শরবত খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকমের অসুখ-বিসুখ ভালো হয়ে
যায়। এটা শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই আর দেরি না করে চলুন পুদিনা
পাতার শরবত এর উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
পুদিনা শরবতে বিদ্যমান রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এবং
মেন্থল যেটা আমাদেরকে খাদ্য হজম করার জন্য সহায়তা করে৷ পুদিনা পাতার শরবত
খাওয়া ফলে পেটের ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। মেয়েদের পিরিয়ডকালীন সময়ে
পুদিনা পাতার শরবত খেলে পিরিয়ডের ব্যাথা থেকে রেহাই পায় এবং এটা রক্ত শোধনে
সহায়তা করে।
ক্যান্সারের রোগীদের জন্য পুদিনা পাতা শরবত অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও পুদিনা
পাতার শরবত খাওয়ার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়, মুখের ব্রণ দূর হয়ে
যায় এবং ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ করে তোলে। ক্যান্ডিডার মতো একটি রোগ দূর করার
জন্যও পুদিনা পাতা শরবত অত্যন্ত উপকারি।
প্রায় বেশিভাগ মানুষের শরীরেই এলার্জি রোগ হয়ে থাকে। কিন্তু এটার কোন স্থায়ী
সমাধান তারা খুঁজে পায় না। পুদিনা পাতার শরবত খেলে এলার্জির রোগ নিস্তেজ হয়ে
যায়। তাছাড়াও রমজান মাসে মানুষ সারাদিন রোজা রাখার পর ক্লান্তি অনুভব করে।
তাই রমজান মাসে রোজা রেখে ইফতারের সময় এই পুদিনা পাতা শরবত খেলে সারাদিনের
ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায় এবং শরীরকে আরামদায়ক করে তোলে।
পুদিনা পাতা শরবত যেভাবে তৈরি করবেন-
উপকরণঃ দুই মুঠো পুদিনা পাতা। তিন গ্লাস পানি। পুদিনার শরবতকে
স্বাদ করার জন্য সাথে কিছু বিট লবণ দিতে পারেন। জিরা ভেজে গুঁড়ো করে ২ চামচ
নিয়ে নিন। দুই চামচ লেবুর রস। সাথে দুই থেকে তিনটি কাঁচামরিচ। এবং আপনি যতটুকু
মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন ঠিক ততটুকু অনুযায়ী চিনি নিয়ে নিন।
তৈরির পদ্ধতিঃ পুদিনা পাতাগুলো এবং উপরের উপকরণ গুলো একসাথে নিয়ে
সুন্দর করে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। অতঃপর ধোয়া পুদিনা পাতাগুলো একটি
ব্লেন্ডারে নিয়ে সুন্দর করে ব্লেন্ড করে নিন। একটি ছাকনী ও পাত্র নিয়ে তারপর
ছাকনী দিয়ে ভালোভাবে ছেকে পাত্রটির মধ্যে রাখুন। তারপর এটিকে ঠান্ডা করার জন্য
ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিন।
এরকম ভাবে পুদিনা পাতার শরবত বানিয়ে প্রতিনিয়ত রুটিন অনুযায়ী পান করতে পারলে
শরীরের বিভিন্ন রকমের অসুখ-বিসুখ থেকে রেহাই পেতে পারেন। এবং এটা পান করার ফলে
শরীরের প্রশান্তি এনে দিবে।
পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা
পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা, চা কথাটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আমরা
প্রতিনিয়তই তৃপ্তি মেটানোর জন্য চা পান করে থাকি। এ চা পান করার ফলে আমাদের
তৃপ্তি মেটে। কিন্তু আপনি কি জানেন? এমন এক প্রকার চা আছে যেটা খাওয়ার ফলে
আমাদেরকে বিভিন্ন প্রকারের রোগবালাই থেকে রক্ষা করে শরীরকে সুস্বাস্থ্য করে
তুলে।
সেটা হলো পুদিনা পাতার চা। হ্যাঁ, আপনি ঠিকই দেখেছেন। পুদিনা পাতার চা আমাদের
শরীরকে বিভিন্ন প্রকার রোগবালাই থেকে রেহাই দিয়ে সুস্বাস্থ্য করে তুলে। চলুন
তাহলে পুদিনা পাতার চা এর উপকারিতা সম্পর্কে জানা যাক-
ঠান্ডা, কাশি, গলা ব্যথা, মাথা ব্যাথা, পেট ব্যাথা এগুলো আমাদের জীবনের
প্রতিনিয়ত একটি রোগ। এই রোগ গুলো সবারই প্রায় সময় হয়ে থাকে। আর এইসব
রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে পুদিনা পাতার চা খুবই অবদান রাখে। প্রতিনিয়ত যদি
আপনি পুদিনা পাতার চায়ের ভেষজ খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন তাহলে অনেক রকমের রোগ
বালাই থেকে পরিত্রান পাবেন।
চিকিৎসকদের মতে, পুদিনা পাতার যে সুঘ্রান এটার প্রভাবেই বিভিন্ন রকমের রোগ দূর
হয়ে যায়। পুদিনা পাতার মধ্যে যে সুন্দর সুঘ্রাণ রয়েছে এটা মানুষের নাকে গেলে
তারপর নাক থেকে মানুষের মস্তিষ্কতে পৌঁছানোর পরই রক্তের সঞ্চারণ বৃদ্ধি পায়।
প্রেসারের রোগী, ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য পুদিনা পাতার চা খুবই উপকারী।
যাদের এসব রোগ আছে তারা প্রতিনিয়ত পুদিনা পাতার চা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে
পারেন। এতে করে আপনাদের শরীরের সুস্বাস্থ্যতা বয়ে আনবে এবং শরীরকে রাখবে সতেজ।
পুদিনা পাতার মধ্যে রয়েছে অধিক পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এবং এটা খুব
সুঘ্রাণ ও বটে। প্রতিনিয়ত যদি আপনি দুই কাপ পুদিনা পাতার চা খান তাহলে আপনার
শরীর সবসময় সুস্থ থাকবে।
একটি পাত্রে হালকা পরিমাণে পানি নিয়ে তা চুলায় বসিয়ে কিছুক্ষণ গরম করে নিন।
তারপর তাতে দুই মোট পুদিনা পাতা দিয়ে দিন। এটা ভালোভাবে ফুটিয়ে চুলা থেকে
নামিয়ে সুন্দর করে একটি ছাকনী দিয়ে ছেকে নিন। তারপর এটিকে মিষ্টি করার জন্য
একটু মধু দিতে পারেন। এতে করে মিশ্রণটি মিষ্টি হবে। এভাবে বানিয়ে যদি
প্রতিনিয়ত খান তাহলে মেলা উপকার পাবেন।
আমাদের প্রতিনিয়ত নানান রকমের সমস্যা লেগেই থাকে যেমন হতাশাগ্রস্ত, মানসিক
চাপ, টাকা পয়সার চিন্তা, পরিবারের চাপ। এসব সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়ার জন্য
পুদিনা পাতার চা খেতে পারেন। এটা খাওয়ার ফলে এরকম বিভিন্ন রকমের সমস্যা থেকে
সমাধান পাবেন শরীর স্বাস্থ্য সব সময় সুস্থ থাকবে।
পুদিনা পাতার ত্বকের উপকারিতা
পুদিনা পাতার ত্বকের উপকারিতা, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ
একটি ভেষজ হলো পুদিনা পাতা। আমরা আমাদের ত্বকের সুরক্ষার জন্য প্রতিনিয়ত
বিভিন্ন রকমের উপাদান ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু ত্বকের জন্য সব থেকে ভালো ও
গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কোনটি যেটা আমার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করবে সেটা সম্পর্কে
আমাদের ধারণা নেই।
পুদিনা পাতা ব্যবহারের ফলে আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায় এবং ত্বককে
রাখা যায় সুরক্ষিত। তাহলে চলুন পুদিনা পাতার ত্বকের উপকারিতা জানি। ত্বকের
যত্ন করার জন্য বাজার থেকে বিভিন্ন উপাদান কিনে তা আমরা ব্যবহার করি। কিন্তু
যদি আমরা সঠিক নিয়ম জানি তাহলে ঘরোয়া ভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়ার উপাদান তৈরি
করতে পারি।
ঘরোয়া ভাবে ত্বকের যত্ন করার জন্য পুদিনা পাতার ব্যবহার অতুলনীয়। আপনার
শরীরের কোন অংশ যদি কেটে যায় কিংবা ঘা হয়ে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রে পুদিনা পাতা
বেটে তার পেস্ট যদি ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিতে পারেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি এর
ভালো ফল পাবেন। তাছাড়াও বাটা পুদিনা পাতার রসগুলো সংগ্রহ করে সেটা ক্ষতস্থানে
ব্যবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি ক্ষতস্থান শুকিয়ে যায়।
পুদিনা পাতা ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ত্বকের বিভিন্ন
অংশ থেকে ময়লা সরিয়ে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে পুদিনা পাতা। মুখে ব্যবহার
করার জন্য পুদিনা পাতার একটি প্যাক তৈরি করুন। তারপর সেটা ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট
মুখে মাখিয়ে রাখুন। এটার মাধ্যমে আপনার ত্বকের মধ্যে রিঙ্কেলের যত সমস্যা আছে
তা সমাধান হয়ে যাবে।
পুদিনা পাতা ব্যবহার করলে আপনার শরীরের রক্ত সঞ্চরণ ঠিক থাকবে। পুদিনা পাতা
ব্যবহারের ফলে মুখের মধ্যে ব্রনের ছোট বড় সব রকমের দাগ দূর হয়ে যাবে। তাই
ত্বকের উপকারিতার জন্য প্রতিনিয়ত পুদিনা পাতার ব্যবহার করবেন। এতে করে যেমন
আপনার ত্বক সব সময় সুরক্ষিত থাকবে ঠিক তেমনি ত্বকের বিভিন্ন প্রকার সমস্যা
থেকে রক্ষা করতে পারবেন।
পুদিনা পাতা খেলে ওজন কমে
পুদিনা পাতা খেলে ওজন কমে উপরে আমরা পুদিনা পাতার চায়ের গুরুত্ব সম্পর্কে খুব
ভালোভাবে ধারণা নিতে পেরেছি। পুদিনা পাতার চা খেলে আমাদের শরীরের জন্য কতটা
উপকারী সেটা সম্পর্কে জেনেছি। এখন আমরা জানবো পুদিনা পাতা বা এর চা খেলে ওজন
কমার সম্পর্কে। পুদিনা পাতার চা শরীরের ওজন কমানোর জন্য অত্যন্ত উপকারী। পুদিনা
পাতা যেভাবে খেলে ওজন কমতে সাহায্য করে-
প্রথমে কিছু পুদিনা নিয়ে সেটা একটি কাঁচি দিয়ে কুচি কুচি করে কাটুন। তারপর
কাটা পুদিনা পাতাগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এভাবে পাঁচ থেকে দশ মিনিট কাটা
পুদিনা পাতাগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন।
তারপর সেই ভেজা পুদিনা পাতার পানিটা একটা পাত্রের মধ্যে সংগ্রহ করে তা রাতের
বেলা ফ্রিজে রেখে দিন। এভাবে সারা রাত রেখে পরদিন সকালে ফ্রিজ থেকে পানিটা
নামিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তারপর এ পানিটা সারাদিনই একটু একটু করে খেতে থাকেন।
পানিটাতে একটু লেবুর রস ছিটিয়ে দিতে পারেন।
আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজনটা কমানোর জন্য পুদিনার চা খেতে পারেন। পুদিনার চা ই
হতে পারি আপনার ওজন কমানোর একটি ভালো উপায়। কিছু পুদিনা পাতা নিয়ে রোদের
মধ্যে শুকিয়ে এটি সংগ্রহ করুন। এরপর শুকনো পুদিনা পাতাগুলো গরম পানির মধ্যে
ছেড়ে দিন। এভাবে পানিগুলো কিছুক্ষণ গরম করতে থাকুন। গরম করা পুদিনা পাতার পানি
গুলোর সাথে হালকা একটু মধু দিয়ে সেটা দিনে দুইবার খেতে পারেন। এটা আপনার ওজন
কমানোর জন্য সহায়ক হবে।
যদি খাবার খাওয়ার পর হজম ভালো হয় তাহলে আপনার ওজন কমবে। তাই দইয়ের সঙ্গে
হালকা একটু পুদিনা পাতা কেটে কুচি কুচি করে দিয়ে দিতে পারেন। গরমের সময় আপনার
পেটের জন্য এটা খুবই উপকার হবে। খাবার খাওয়ার পর দই খেলে তা হাজমে সহায়তা
করে। তাই দইয়ের সঙ্গে যদি পুদিনা পাতা কুচি কুচি করে কেটে দিয়ে খান তাহলে সেটা
আপনার ওজন কমানোর জন্য সাহায্য করবে।
তাই আপনি যদি আপনার ওজন কমাতে চান তাহলে উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে প্রতিনিয়ত
পুদিনা পাতা খান। তাহলে খুবই তাড়াতাড়ি আপনি আপনার ওজন কমাতে পারবেন। এবং
আপনার শরীরকে সুন্দর হ্যান্ডসাম করে তুলতে পারবেন।
পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক
পুদিনা পাতা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী এটা বাহারি রকমের রোগের সমস্যার
সমাধান দিয়ে থাকে। এটি খুবই উপকারী একটি ভেষজ। কিন্তু সবকিছুরই একটি ক্ষতিকর
বা নেতিবাচক দিক রয়েছে। পুদিনা পাতার অনেক উপকার থাকলেও এটারও ক্ষতিকর দিক
রয়েছে। আপনার যতটুকু প্রয়োজন তা থেকে বেশি যদি পুদিনা পাতা খান তাহলে এটা
আপনার শরীরের উপর প্রভাব ফেলবে।
শরীরের ক্ষতি সাধন করবে। অধিক পরিমাণ পুদিনা পাতা খেলে এটা আপনার যৌন সমস্যার
কারণ হতে পারে। পুদিনা পাতার তেল ব্যবহার করা আমাদের জন্য উপকারী কিন্তু ছোট
বাচ্চাদের পুদিনা পাতার তেল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন। এটা শিশুদের শরীরের
জন্য অনুপযোগী।
খুব ঘন পুদিনার তেল ত্বকের মধ্যে ব্যবহার করার ফলে ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টিসহ
ত্বক লাল হয়ে যেতে পারে। তাই পুদিনা পাতা ব্যবহার করলে পরিমাণ মতো ব্যবহার
করবেন। যাতে এটা আপনার শরীরের মধ্যে কোন রকমের প্রভাব না ফেলতে পারে।
শেষ কথাঃ রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার
পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা, রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার ইত্যাদি
সম্পর্কে সুন্দর করে আলোচনা করা হয়েছে। যদি আপনি উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে
প্রতিনিয়ত পুদিনা পাতা খেতে পারেন এবং রূপচর্চায় পুদিনা পাতার ব্যবহার ও এটার
সঠিক ব্যবহার করতে পারেন তাহলে এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারিতা বয়ে
আনবে। এ পুদিনা পাতা ব্যবহারের ফলে আপনি সবসময় সুস্থ থাকবেন।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে পুদিনা পাতার
সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানতে পেরেছেন। আমার এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে যদি
আপনারা উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে এই লেখাটি আপনার বন্ধুর কাছে শেয়ার করতে পারেন
যাতে করে আপনার বন্ধুও এই লেখাটি পেয়ে আপনার মতো উপকৃত হতে পারে।
প্রতিনিয়ত সুস্থ থাকার জন্য এবং অন্যান্য বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে তথ্য
জানতে আমার এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে
অসংখ্য ধন্যবাদ। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আমার এই লেখাটি আজকে শেষ করছি।
আর এইচ ড্রিম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url