চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার ও চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার কিংবা চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে
জানতে চান? চুলকানি বা চর্মরোগ হলে নিম পাতা ব্যবহার করলে খুবই তারাতাড়ি ফল পাওয়া
যায়। আপনার যদি চুলকানি হয়ে থাকে আর এর যদি কোনো স্থায়ী সমাধান না পান তাহলে
চুলকানি ভালো করার জন্য নিম পাতা ব্যবহার করুন।
আপনি যদি চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার বা চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার
সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আমরা এই
আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাকে এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। তাই এগুলো জানার
জন্য আর্টিকেলটি মনযোগ সহকারে পড়ুন।
পেজ সূচিপত্রঃ চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার, চুলকানি মানুষের শরীরে খুবই বিরক্তিকর একটি
অসুখ। যেটা মানুষের শরীরে একবার হলে সারা জীবন পস্তাতে হয়। আপনি হয়তো এই
চুলকানি থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের ওষুধ বা গাছ গাছালি ব্যবহার
করেছেন। কিন্তু এগুলো ব্যবহারের ফলে কোন উপকার পাচ্ছেন না। আপনার হয়তো এ
বিষয়ে অজানা যে চুলকানি কে নিমিষেই দূর করার জন্য নিম পাতার ব্যবহার খুবই
গুরুত্বপূর্ণ।
হ্যা, আপনি ঠিকই শুনেছেন চুলকানি রোগ ভালো করার জন্য নিম পাতা ব্যবহারে কোন
বিকল্প নেই। নিমের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকমের গুনাগুন। এটা বাহারি রকমের
রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর এজন্য 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা'
নিমকে ২১ শতকের উপকারী বৃক্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আপনি সিদ্ধ নিম পাতার পানি দিয়ে যদি গোসল করেন তাহলে শরীরে বিভিন্ন রকমের
খোসপাচড়া দূর হয়ে যায়। মিমের পাতা বা নিমের ফুল শরীরে চুলকানির জন্য খুবই
উপকারী একটি ঔষধ। কিছু নিমপাতা সাথে কিছু ফুল নিয়ে ভালো করে ধুয়ে সেটা যদি
একটি শীল পাটায় ভালো করে বেটে পেস্ট করে সেই পেস্ট শরীরের দেয়া যায় তাহলে
চুলকানি ভালো হয়েছে।
একটি হাঁড়িতে কিছু নিম পাতা দিয়ে তা কর্রা করে বেজে সেটা যদি সুরেশ তেলের
সাথে মিশিয়ে শরীরের চুলকানি জায়গায় দিতে পারেন তাহলে খুবই তাড়াতাড়ি
চুলকানি ভালো হয়ে যাবে। নিম পাতা বেটে সেটা শরীরের মধ্যে দিলে শরীরের
চুলকানি দূর হয়ে যাবে। তাই আপনার শরীরে যদি চুলকানি পনিত সমস্যা থেকে থাকে
তাহলে উপরোক্ত নিয়ম মোতাবেক নিম পাতার ব্যবহার করুন। তাহলে এটা ব্যবহারের
ফলে আপনার শরীরের চুলকানি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।
নিম পাতার ব্যবহার
নিম পাতার ব্যবহার বহুকাল আগে থেকেই মানুষ রোগ নিরাময়ের ওষুধ হিসেবে নিম পাতার
ব্যবহার করে আসছে। নিম পাতা বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন-
শরীরে ত্বক, চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার, এলার্জি, মুখের ব্রণ দূর করা এবং আরো
অনেক রকম রোগের পরিষেধক হিসেবে নিমপাতা ব্যবহার করা হয়। মানুষের সৌন্দর্য
বৃদ্ধি করতেও নিম পাতার ব্যবহার অপরিহার্য।
কিন্তু আধুনিক এই যুগে মানুষ নিম পাতা ব্যবহার না করে কসমেটিকের ব্যবহারের ফলে
বিভিন্ন রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। নিমপাতা খুব তিক্ত জাত একটি পাতা। কিন্তু
এই পিকটা জাত পাতার অনেক রকমের গুনাগুন রয়েছে। চলুন আমরা চুলকানিতে নিম পাতার
ব্যবহার ও নিম পাতা ব্যবহারের বিভিন্ন গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জেনে
নিই।
- ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধক হিসেবে নিম পাতা ওষুধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। নিমপাতা শরীরের ত্বককে সুন্দর ও মসৃণ করে তুলে। এর ব্যবহারের ফলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। মুখের মধ্যে ব্রণ সৃষ্টি হলে নিমপাতা বেটে মুখে লাগিয়ে দিলে নিমিষেই ব্রণ দূর হয়ে যায়।
- আপনাদের হয়তো মাঝেমধ্যেই মাথায় চুলকানি হয় যার ফলে অনেক বিরক্ত লাগে। সেক্ষেত্রে নিম পাতা বেটে বা ব্লেন্ডার করে তার রস মাথায় দিলে মাথার মধ্যে যে চুলকানি ভাব হয় সেটা দূর হয়ে যায় এর ফলে চুলের গুড়া মজবুত হয়। নিম পাতার রস নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- নিম পাতা শুধু চুলের উপকারিতা জন্যই কাজে আসে না বরং আপনার শরীরে যদি চুলকানি থেকে থাকে তাহলে নিমপাতা দিতে ব্যবহার করতে পারেন। বাটা দিন পাতা শরীরের মধ্যে লাগালে চুলকানি দূর হয়ে যায়।
- নিম পাতা আর কাঁচা হলুদ একসাথে করে তা বেটে বা ব্লেন্ডার করে শরীরে দিতে পারেন তাহলে শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যখন নিম পাতার সাথে হলুদ বেটে ব্যবহার করবেন তখন রোদ থেকে দূরে থাকবেন। আর নিম পাতা এবং কাঁচা হলুদ বাটার সময় নিম পাতা একটু বেশি নিবেন এবং কাঁচা হলুদ কম পরিমাণে নিবেন। এটা শরীরের জন্য পারফেক্ট হবে।
- মিমের তেল শরীরের ত্বক ও মাথার চুলের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন ই।
- নিম পাতা খেতে পারলে শরীরের বিভিন্ন রকমের অসুখ-বিসুখ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। নিম পাতা খাওয়ার ফলে শরীরে পরিপাকতন্ত্রের গতি বৃদ্ধি পায়। নিম পাতা খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের মধ্যে যেসব বিষাক্ত পদার্থগুলো থাকে সেগুলো দূর হয়ে যায়। তাছাড়া ও এটা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের রক্তের শুদ্ধতা বৃদ্ধি করবে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুস্থ থাকার জন্য প্রতিনিয়ত চারটি থেকে পাঁচটি নিম পাতা চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়ার প্রয়োজন। এতে করে শরীরে বয়ে আনবে সুস্থতা এবং আরাম।
- প্রতিনিয়ত কাঁচা নিমপাতা খাওয়ার ফলে যদি আপনার মুখ তেতো হয়ে যায় তাহলে এটা খাওয়ার অন্য উপায় হল- কিছু নিম পাতা নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে একটি শীল পাটায় এটা বেটে বড়ির মত আকার তৈরি করুন। তারপর এটা শুকিয়ে রেখে দিতে পারেন। এই শুকনো বড়ি গুলো প্রতিদিন একটি থেকে দুইটি পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলুন। এটা খাওয়ার ফলে বিভিন্ন রকমের অসুখ বিসুখ থেকে মুক্তি মিলবে।
- মানুষের মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য নিমের ডাল খুবই উপকারী হিসেবে কাজ করে। এটা মেসওয়াক বানিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করলে মুখের দুর্গন্ধ ও দাঁতের মধ্যে দুর্গন্ধ আছে তা দূর হয়ে যায়।
চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার
চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার চর্মরোগ খুবই ভয়াবহ একটি রোগ। উপরে চুলকানিতে
নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে খুব ভালো করে আলোচনা করা হয়েছে। বহুল প্রচলিত একটি
কথা আছে যে, বর্ষাকালে চর্ম রোগের দেখা দেয়। চর্মরোগ খুবই তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে
যায়। বর্ষাকালে আদ্রতা তৈরি হওয়ার কারণে অতি তাড়াতাড়ি চর্মরোগ ছড়িয়ে
যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই এমন আছি যারা চর্ম রোগের পরিষদ হিসেবে কোন চিকিৎসা
পাচ্ছি না।
এর ফলে অনেক মানুষ চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। চর্মরোগের পরিষেধক হিসেবে
নিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। আপনার যদি চর্মরোগ হয়ে থাকি তাহলে নিমপাতা
ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এটি আপনার ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী একটি ঔষধ।
শরীরের বিভিন্ন রকমের রোগ জীবাণু দূর করার জন্য চর্ম রোগের কোন বিকল্প নেই।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও ত্বককে সতেজ করার জন্য নিম পাতার পেস্ট ব্যবহার করা
সর্বোৎকৃষ্ট চিকিৎসা। আর বর্ষাকালে চর্মরোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সব
সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং শুকনো কাপড়লতা পরিধান করুন। আর হাত পা বেশি বেশি
ভেজানো থেকে দূরে থাকুন। বিশেষ করে বর্ষাকালে ময়লা পানিতে হাত পা ভেজাবেন না।
মূলত এটির কারণে বেশিরভাগ চর্মরোগ হয়ে থাকে। চর্ম রোগের পরিসেধক হিসেবে নিম
পাতা অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ ওষুধ। চর্মরোগ হলে যেভাবে নিম পাতা ব্যবহার
করবেন চলুন সেটা দেখে নেয়া যাক-
- নিমের মধ্যে আছে অনেক ওষুধী গুনাগুন। বিভিন্ন রকমের রোগ থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য নিম গাছের সবকিছুই ব্যবহার করা যাই। নিমের পাতা, নিমের শিকর, নিমের ফুল এছাড়াও নিম গাছের সব উপাদান রোগ নিরাময়ের পরিষদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- নিম গাছের একটু ছাল, নিমের বীজ ও নিমের পাতা একসাথে করে ভালো করে বেটে পেস্ট করে নিন। তারপর সেটা ত্বকের চর্মরোগ বা চুলকানির জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এটি খুবই কার্যকরী একটি উপাদান। এটি মুখে ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ দূর হয়ে যাবে। আর শরীরে প্রশান্তি এনে দিবে। তাছাড়াও শরীরে কোনো অংশ যদি কেটে যায় কিংবা ফোড়া হয় তাহলে এটা লাগাতে পারে। এটা লাগানোর ফলে খুবই তাড়াতাড়ি শরীরের মধ্যে যে ফোড়া এবং কথা ক্ষতস্থান থাকবে সেটি শুকিয়ে যাবে।
- নিম গাছ থেকে শুকনো ছাল সংগ্রহ করে সেটা গুঁড়ো করে পাউডার তৈরি করুন। তারপর সেখান থেকে একটু পাউডার নিয়ে এক গ্লাস পানিতে রাতে ভিজিয়ে রাখবেন।
- সকালে ঘুম থেকে উঠে পাউডার যুক্ত পানিটির সাথে একটু মধু মিশিয়ে নিন। তারপর এই পানিটি শরীরে ব্যবহার করুন। এটা চর্মরোগকে ধমন করার জন্য অত্যন্ত উপকারী।
আর উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে যদি নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন তাহলে খুবই
তাড়াতাড়ি চর্মরোগ থেকে রেহায় পাবেন ইনশাআল্লাহ।
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয়
খালি পেটে নিম পাতার রস খেলে কি হয় নিম পাতা যেটা আমাদের অজানা খুবই
গুরুত্বপূর্ণ একটি মহা ঔষধ। এই নিম বিভিন্ন রকমের রোগব্যাধি থেকে রেহাই দেয়।
তাছাড়া ও সকালে যদি আপনি খালি পেটের নিম পাতার রস খান তাহলে এটা শরীরের জন্য
খুবই উপকার। নিম পাতার রসের মধ্যে রয়েছে এসিডিটি নিরাময়ের একটি ভালো গুণ।
আর নিম পাতা নিয়ে যদি গরম পানিতে ফুটিয়ে খান তাহলে এটা স্বাস্থ্যের জন্য
ভালো। সিদ্ধ নিম পাতা খেলে আপনার এসিডিটি এবং শরীরের যেকোনো জায়গার ব্যথা দূর
হয়ে যাবে। আর পেটের ব্যথা দূর হয়ে যায়। নিম পাতার মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের
ভিটামিন, অ্যানটিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেল যেটা আপনার রোগ প্রতিরোধের সক্ষমতা
বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এখানেই শেষ নয়, ঠান্ডা এবং কাশি ভালো করার জন্য নিম পাতার ব্যবহার অতুলনীয়।
আপনাদের অনেকেরই হইতো প্রায় সময়ই বুকের মধ্যে ব্যাথা হয়ে থাকে। আর এ বুকের
ব্যাথা ভালো করার জন্য অনেক চিকিৎসা করে যাচ্ছেন কিন্তু এর কোন ফল পাচ্ছেন না।
নিমপাতা এমন একটি ওষুধ যেটা বুকের ব্যথাকে দমন করতে সাহায্য করে থাকে।
তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ নিমপাতা নিয়ে এটিকে ভালোভাবে ধুয়ে একটি শীল পাটায় বেটে
এটার রস বের করে নিতে হবে। তারপর সামান্য কুসুম গরম পানিতে হাফ বা এক চামচ নিম
পাতার রস ভালোভাবে মিশিয়ে খালি পেটে খেলে বুকের ব্যাথা দূর হয়ে যায়। তবে
গর্ভবতী মহিলা, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষদের নিম পাতার রস খাওয়া যুগোপযোগী হবে না।
এটা তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। পানির সঙ্গে হালকা মধু মিশিয়ে
সেটার সাথে এক চামচ নিম পাতার রস দিয়ে ভালোভাবে সংমিশ্রণ করে এটা খালি পেটে
খেলে পেটের ভেতর সমস্ত যন্ত্রণা হয়ে যাবে। আবার এটা খেলে শরীরের ভেতরের রক্ত
চলাচলকে সমৃদ্ধ করে।
প্রতিনিয়ত রুটিন করে যদি আপনি নিম পাতার পেস্ট বা নিম পাতার রস খেতে পারেন
তাহলে এটা আপনার শরীরের হরমোন এর মাত্রা কে কন্ট্রোল করতে সহায়তা করবে। নিম
পাতার রস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও বেশ উপকারী। প্রতিনিয়ত রুটিন করে একাধারে
আড়াই থেকে তিন মাস যদি দুই চামচ নিম পাতার রস খেতে পারেন তাহলে আপনার
ডায়াবেটিস ভালো হয়ে যাব।
তাছাড়া ও এটা খাওয়ার ফলে ৩৫ থেকে ৭০% ইনসুলিন গ্রহণ করার সক্ষমতা কমে। শুধু
এটাই নয় নিম পাতার রস খাওয়ার ফলে জন্ডিস এর মত বড় রোগ ও ভালো হওয়ার সম্ভবনা
থাকে। নিয়ম করে যদি আপনি প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ ফোটা নিম পাতার রস এক চা চামচ
মধুর সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে তা খালি পেটে খান তাহলে জন্ডিস ভালো হয়ে যাবে।
এছাড়াও এই নিম পাতার রস খেলে অনেক রকমের অসুখ-বিসুখ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
তাই বিভিন্ন রকমের অসুস্থতার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যদি আপনি প্রতিনিয়ত নিম
পাতা খেতে চান তাহলে আপনি চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে নিমপাতা খান।
এতে যেমন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন তেমনি বিভিন্ন রকমের ঝুঁকি থেকে রেহাই
পাবেন।
নিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
নিম পাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় এখনকার যুগে এমন কোন মানুষ নেই, যে চাইনা
তার মুখে ব্রণ দূর করতে, মুখের উর্ধ্বলতা বাড়াতে কিংবা তার মুখেকে ফ্রেশ
রাখতে। সবাই তার মুখের উজ্জলতা বাড়ানোর জন্য অনেক চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু
আপনারা হয়তো অনেকেই এর সঠিক গাইডলাইন না থাকার কারণে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি
করতে পারছেন না।
আপনারা কি জানেন নইম এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেটা আপনার মুখের ব্রণ দূর
করতে, শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। এটা যদি আপনি না জেনে থাকেন
তাহলে আপনাকে জানাবো নিমপাতা দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় ও নিমপাতা ব্যবহারের
মাধ্যমে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপায়। তাহলে চলুন জানা যাক-
আপনার মুখের ব্রণের দাগ দূর করার জন্য নিম পাতার পানি ব্যবহার করতে পারেন। আর
সেটার জন্য কিছু নিম পাতা ভালোভাবে ধুয়ে সেটা গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন। তারপর
গরম নিম পাতা গুলো ফুটন্ত পানি থেকে আলাদা করে সরিয়ে রেখে দিন। ফুটন্ত পানি
গুলো ঠান্ডা করে সেটা প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পুরো মুখে লাগেয়ে নিন।
আপনার মুখ যদি তেল যুক্ত হয়ে থাকে তাহলে নিম পাতার পানির সাথে গোলাপ জল মিশিয়ে
তারপর ব্যবহার করতে পারেন। নিম পাতা ব্যবহার করলে শুধু শরীরের ত্বকের সৌন্দর্যই
বৃদ্ধি পায় না, এটা ব্যবহারের ফলে শরীরের বিভিন্ন রকমের জীবাণু ধ্বংস হয়ে
যায়। কিন্তু শরীরে না মুখে নিমপাতা ব্যবহার করার জন্য নিয়ম জানতে হবে।
নিয়ম না জেনে আপনি যদি মুখে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নিমপাতা ব্যবহার করেন তাহলে
এটা করে আপনার ক্ষতি সাধন হতে পারে। নিমপাতা ব্যবহার করতে বিশেষ কোনো সময় এর
প্রয়োজন নেই, এটি আপনি সারা বছরই ব্যবহার করতে পারবেন। নিমপাতা ব্যবহার করলে
আপনার ত্বক স্মুথ ও নরম হবে। এবং ত্বক সবসময় সুস্থ সতেজ থাকবে।
নিম পাতা ধুয়ে ভালো করে পেস্ট করে সেটার সাথে জলপাই তৈল যুক্ত করে সেটা মুখে
ব্যবহার করুন। তারপর অনেকক্ষণ এটি মুখে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
ঠিক এভাবে সপ্তাহে দুইবার এটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার ত্বক সুন্দর
হবে এবং সুস্থ থাকবে। আর এইভাবে যদি আপনি প্রতিনিয়ত নিয়ম করে নিম পাতা আপনার
ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার ত্বক সবসময় সুন্দর ও মসৃণ থাকবে।
চুল পড়া বন্ধ করুন নিম পাতা দিয়ে
চুল পড়া বন্ধ করুন নিম পাতা দিয়ে চুল পড়া, যেটা প্রায় অনেক মানুষের জীবনেই
খুবই কমন একটি সমস্যা। কিছু পড়া বন্ধ করার জন্য মানুষ বিভিন্ন রকমের উপায়
ব্যবহার করে থাকে কিন্তু কোন ফল পাই না। আপনিও হয়তো প্রতিনিয়ত চুল পড়ার
সমস্যায় প্রতিনিয়ত ভুগছেন। কিন্তু এটার কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না। আপনি কি
জানেন নিমপাতা ব্যবহার করে চুল পড়া সমস্যা থেকে রেহায় পাওয়া যায়।
যদি আপনার না জানা থাকে তাহলে চলুন আমরা চুল পড়া থেকে রেহায় পাওয়ার জন্য নিম
পাতার ব্যবহার সম্পর্কে জানি। একটি পাত্রে ঠান্ডা পানি নিয়ে কিছু মেথি তিন
থেকে চার ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এবার অনেকগুলো নিম পাতা নিয়ে এগুলো ভালোভাবে
ধুয়ে সেগুলো মিশিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ডার করুন। এখন ব্লেন্ডার করা এই পেস্টটির
সাথে লেবুর রস এবং দই মিশিয়ে নিন।
তারপর চুলের মধ্যে যেকোনো তেল দেন। চুলে তেল দেওয়ার পরে ব্লেন্ডার করা পেস্টটি
চুলে ভালোভাবে মাখিয়ে ১-২ ঘন্টা অপেক্ষা করুন। তারপর গোসলে গিয়ে চুলের মধ্যে
শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। সাপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই পেস্ট আপনার চুলের মধ্যে
দেন। তারপর দেখতে পাবেন কিছুদিনের ভেতর আপনার চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
কিছু আমলকি বেটে সে আমলকির রস সংগ্রহ করে সেটার সাথে নিম পাতার রস ও লেবুর রস
দিয়ে তা একসাথে সাথে সংমিশ্রণ করে সপ্তাহে তিন দিন চুলে লাগা। এইসব সংমিশ্রণটা
ব্যবহার করার পর গোসল করার সময় শ্যাম্পু ব্যবহার করেন। তাহলে চুল পড়া বন্ধ
হয়ে যাবে। এছাড়াও নিম পাতা সুন্দর করে বেটে তা চুলের মধ্যে দিতে পারেন।
এগুলো ব্যবহার করার ফলে আপনার চুল পড়া তো কমবেই সাথে আপনার চুলের গুড়া মজবুত
ও সতেজ হবে। আর যদি আপনার প্রতিনিয়ত চুল পড়ে থাকে তাহলে এটা বন্ধ করার জন্য
নিয়ম মোতাবেক নিম পাতা ব্যবহার। নিম পাতা ব্যবহারের ফলে আপনার পড়া বন্ধ হবে।
নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয়
নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ মুখে দিলে কি হয় শরীরের উপকারিতার জন্য এবং ত্বকের
সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নিম পাতার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত আছি।
কিন্তু এটার সঠিক নিয়ম না জানার কারণে ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারছি নাম।
বহুকাল আগে থেকে মানুষ একটা কথায় বিশ্বাসী যে, যার বাড়িতে একটি নিমগাছ থাকবে
তার বাড়িতে যেন একটি ডাক্তার বসবাস করে।
মানুষের শরীরের প্রায় বিভিন্ন অংশের যেমন মাথার চুল, মুখ সুন্দর ও মসৃণ রাখার
জন্য নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে কাজ করে থাকে। তাছাড়া নিম
পাতাও কাঁচা হলুদ আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। নিমপাতা খুবই
কার্যকরী একটি ভেষজ ওষুধ এটা সকলে জানলেও অনেকেই এমন আছে যারা এটার তিক্ত স্বাদ
এবং বাজে গন্ধের কারণে নিম পাতা ব্যবহার করে না।
অনেকেই এমন আছেন যারা শীতকালে মুখের মধ্যে বা দেহে কোন প্রকার প্যাক ব্যবহার
করেন না। আর এর জন্য পুরো শীতকালটা তাদের শরীরের যত্ন ছাড়াই কেটে যায়। আপনি
আপনার বাড়িতে খুব সহজেই নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের সংমিশ্রন করে একপ্রকার বড়ি
বানিয়ে রেখে দিতে পারেন। এটা দীর্ঘদিন টাটকা সতেজ থাকে। প্রতিনিয়ত নিয়ম করে
এ বড়িটি খেতে পারেন।
এই বড়িটি কোন প্রকার তেতো অনুভব হবে না। এটা খাওয়ার ফলে শরীরে বিভিন্ন প্রকার
অসুখ-বিসুখ ভালো হয়ে যাবে এবং আপনার শরীর সবসময় সুস্থ থাকবে। এছাড়াও নিম
পাতা ও কাঁচা হলুদ একসঙ্গে করে ভালো করে ধুয়ে তা বেটে যদি মুখে দেন তাহলে
আপনার মুখের ব্রণ দূর করে মুখকে করে তুলবে সুন্দর ও মসৃণ।
মুখের ব্রণ দূর করার জন্য ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নিম পাতা ও কাঁচা
হলুদের সংমিশ্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিম পাতাও কাঁচা হলুদ এ দুটি প্রাকৃতিক
ভেষজ উপাদান। কাঁচা হলুদ মানুষের শরীরের ডিটক্স এর কাজ করতে সহায়তা করে। নিম
পাতা ও কাঁচা হলুদের সংমিশ্রণ মুখে ব্যবহার করার ফলে মুখের জৈব টনিক্স বের হয়ে
অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করতে সহায়তা করে।
প্রতিনিয়ত নিমপাতা ও কাঁচা হলুদ ব্যবহার করলে আপনার মুখ ফর্সা হবে এবং মুখের
ব্রণ দূর করে স্মুথলি ভাবে সৌন্দর্য করে তুলবে। তাই বিভিন্ন রকমের ফেসওয়াশ
ব্যবহার করার আগে ভেবেচিন্তে আপনার মুখের জন্য যেটা কার্যকরী সেটা ব্যবহার
করবেন। নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ নিয়ে আপনি আপনার ঘরেই ফেসওয়াশ তৈরি করতে পারবেন।
এটা ব্যবহারের ফলে ওকে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য অন্য কোন কিছু প্রয়োজন হবে
না। তবে নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ ব্যবহার করার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যবহার
করবেন। যদি এগুলো বেশি পরিমাণে ব্যবহার করেন তাহলে আপনার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর
হতে পারে।
নিম পাতার ক্ষতিকর দিক
নিম পাতার ক্ষতিকর দিক নিম পাতায় যেমন বিভিন্ন রকমের গুণাগু ও উপকারিতা রয়েছে
ঠিক তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর কি করেছে। আপনাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণে
নিম পাতা যদি প্রতিনিয়ত খালি পেটে খান তাহলে আপনার এটা আপনার ক্ষতি সাধন করতে
পারে। তাই যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই নিপাতা ব্যবহার করলেন।
নিম পাতা খাওয়ার পর যদি দেখেন আপনার বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা কিংবা ডায়রিয়া
হয় তাহলে অতি তাড়াতাড়ি এটা খাওয়া বন্ধ করে দেন। কেননা নিম পাতা খাওয়ার পর
যদি এসব সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে শরীরের ক্ষতি সাধন করতে পারে। আয়ুর্বেদিক
উপাদানে নিমকে খুবই উপকারি একটি ভেষজ ঔষধ হিসেবে বিবেচিত করেছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা, নিমকে প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হিসেবে প্রমাণ
করেছেন। এ নিম পাতায় সবার জন্য বাহারি রকমের গুনাগুন থাকলেও এতে অনেকের জন্য
রয়েছে ক্ষতির আশঙ্কা। কিডনি ও লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে নিম
পাতা খাওয়া সুবিধা হবে বলে মনে করা যায় না।
যারা কিডনি ও লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত আছেন তারা নিম পাতা খাওয়ার জন্য
চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। কেননা আপনি যদি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিম পাতা
প্রতিনিয়ত খান তাহলে এটা আপনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের
ধারণা অনুযায়ী নিম পাতা সব ক্ষেত্রে আপনার শরীরে উপকারিতা বয়ে আনলেও গর্ভবতী
মহিলার নিম পাতা ক্ষতিকর।
কারণ গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে গর্ভাবস্থায় নিম
পাতা খাওয়া। তাই গর্ভাবস্থায় নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। তাছাড়াও একজন
মানুষের নিম পাতা খাওয়ার জন্য নিম পাতা খাওয়ার জন্য চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ
করে নিতে। খালি পেটে বেশি দিন নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
নিম পাতা গ্রহণ করার ফলে মাঝেমধ্যে নারীদের বন্ধ্যাত্ব ও দেখা দিতে পারে। তাই
যেসব নারীরা সন্তান নিতে চান তারা নিম পাতা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অপারেশনের
রোগীদের জন্য নিম পাতা অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই আপনার অপারেশনের দেড় থেকে দুই
সপ্তাহ আগে নিম পাতা খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। আপনি যদি নিমপাতা খেতে চান
তাহলে দৈনিক সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন দিন নিম পাতা খেলে।
এর বেশি খেলে এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই যাদের নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস
আছে এটা খুব ভালো একটি অভ্যাস। এতে করে বিভিন্ন রকমের রোগবালই থেকে রক্ষা
পাওয়া যায়। কিন্তু মনে রাখবেন যে, সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ নিম পাতা খাবেন।
এর কি বেশি নিম পাতা গ্রহণ করবে না। তা না হলে এটা হয়ে উঠতে পারে আপনার
স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকারক একটি উপাদান।
লেখকের মন্তব্যঃ চুলকানিতে নিম পাতার ব্যবহার
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ আজকে আমরা এ আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা
করেছি নিম পাতার সম্পর্কে। কিভাবে নিম পাতা ব্যবহার করতে হয়, চুলকানিতে নিম
পাতার ব্যবহার ছাড়ও নিম পাতা কি কি রোগের পরিষেধক হিসেবে কাজ করে, খালি পেটে
নিমপাতার রস খেলে কি হয়, নিম পাতার ক্ষতিকর দিক ইত্যাদি সম্পর্কে।
আমার এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বন্ধুদের
কাছে এই আর্টিকেল শেয়ার করতে পারেন। যাতে করে আপনার বন্ধুও চুলকানিতে নিম
পাতার ব্যবহার, নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এর গুনাগুন সম্পর্কে
বিস্তারিতভাবে জেনে উপকৃত হতে পারে। প্রতিনিয়ত উপকারী তথ্য সম্পর্কে জানতে
চাইলে আমার এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন। আশা করি আপনি অনেক উপকৃত হবেন।
সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকে আমার এই লেখাটি শেষ করছি। এতক্ষণ আমাদের সাথে
থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আর এইচ ড্রিম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url